গর্ভবতী না হয়েও গর্ভকালীন ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে এক নারীর বিরুদ্ধে। ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না দিয়ে এক ইউপি সদস্যের বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই কথিত গর্ভবতী নারী ওয়ার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু কথিত ওই গর্ভবতীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন অভিযুক্ত ওয়ার্ড সদস্য। ঘটনাটি ঘটেছে- রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ১ নং কল্যানী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, ১ নং কল্যাণী ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের বিহারী গ্রামের মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী মোছা. শিরিনা আক্তার। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে গর্ভকালীন ভাতা কর্মসূচির নামের তালিকায় ভাতাভোগী হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত হয় শিরিনা আক্তারের। কিন্তু ওই সময় শিরিনা আক্তার গর্ভবতী ছিলেন না। কোলে ছিল দুই মাসের সন্তান। এরপরেও নিজেকে গর্ভবতী দাবি করে ভাতার তালিকায় আবেদন করেন তিনি। পরে উপজেলা প্রশাসনের চক্ষু দৃষ্টিকে আড়াল করে অদৃশ্যভাবে ভাতার তালিকায় নাম চলে আসে শিরিনার। ভাতা প্রাপ্তির আবেদনের সময় নিজের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার না দিয়ে ইউপির ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলামের বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে শফিকুল ইসলাম এর বিকাশ নাম্বারেই সিরিনা আক্তারের গর্ভকালীন ভাতার টাকা আসতে থাকে।
শিরিনা আক্তারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম গর্ভবতী ভাতা করে দেওয়ার নামে দশ হাজার টাকা নিয়েছে। আবেদনের সময় আমার বিকাশ নাম্বার না দিয়ে শফিকুল ইসলাম নিজের বিকাশ নাম্বার দিয়েছিলেন। এরপর থেকে শফিকুল ইসলামের বিকাশেই উক্ত ভাতার টাকা আসতো।
অভিযুক্ত ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “১৯ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখে আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। আমি নাকি শিরিনা আক্তারের বিকাশ নাম্বার না দিয়ে আবেদনের সময় নিজের বিকাশ নাম্বার দিয়েছি। কিন্তু ভাতাভোগী শিরিনা আক্তার এটি কখন কিভাবে করেছে তা আমার জানা নেই। তবে ঈদের এক সপ্তাহ পরে আমার ফোনে হঠাৎ কিসের যেন টাকা আসে। পরে ভাতাভোগী শিরিনার বাবা এসে সেই টাকা নিয়ে যায়। আমার মনে হয় আবেদনের সময় ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ভুলবশত আমার নাম্বারটি দিয়েছে”।
১ নং কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম জানান, “আবেদনকারীরা নিজেই এসে আবেদন করেন। অনেক সময় ওয়ার্ড সদস্যরা নিজেও এসে আবেদন করে। তবে শিরিনার আবেদনটি ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম তিনি করেছিলেন। এ সময় তিনি কার নাম্বার ব্যবহার করেছেন সেটি আমি জানিনা”।
এদিকে পীরগাছা উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. সেলোয়ারা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ঘটনাটি জানতে পেরেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব’।
গর্ভবতী না হয়েও গর্ভবতী ভাতার তালিকায় নাম আসার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তা বলেন, শিরিনা আক্তারের কোলে দুই মাসের সন্তান আছে এটি আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব, ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেব”।
গর্ভবতী না হয়েও গর্ভবতী ভাতার টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনায় সচেতনমহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা।