শ্রাবণ সন্ধ্যা। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কফির পেয়ালার সঙ্গে সময় কেটে যাচ্ছে। হাত নাড়তে নাড়তে মেয়েটি এসে বলল— সরি, একটু দেরি হয়ে গেল। মুচকি হাসিতে ‘ওয়াও, কফি!’ বলেই মেয়েটি কফি হাতে নিয়ে চুমুক দিলো। আমিও হাসতে হাসতে কফিতে চুমুক দিলাম। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যিনি আমার সামনে বসে আছেন, তিনি বিশ্ব রাঙানো মডেল ও অভিনেত্রী।
শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভেজা স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেওয়া সেই মানুষটির দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি আজকের অতিথি আজমেরী হক বাঁধন। তাকানো দেখেই বলে দিলো, অনেক দিন পর দেখা আমাদের। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে—সঙ্গে কফি, বাহ দারুণ! আছেন কেমন বলুন? হ্যাঁ, অনেক দিন পর দেখা হলেও মনে হচ্ছে না খারাপ আছি। আমরা ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছি প্রশ্ন-উত্তর পর্বে। চলুন পাঠক, তার সমসাময়িক কাজ ও ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে জেনে নিই আজকের এই সাক্ষাৎকারে।
আরটিভি : দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
আজমেরী হক বাঁধন : দিনকাল খুব ভালোই যাচ্ছে। আমি নতুন করে ড্রাইভিং শিখেছি। আমার লাইসেন্সও হয়ে গেছে। পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পেয়েছি। এখন পুরোদমে গাড়ি চালাতে পারি। এটা আমর জন্য খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। সাঁতার শিখছি, প্রায় একটা জায়গায় চলে আসছি। এই দুটো নতুন বিষয় নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলাম। আর অবশ্যই আমার মেয়ে ও ফ্যামিলিকে সময় দিচ্ছি। বলতে পারেন প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আরটিভি : এখন আপনাকে পর্দায় দেখা যাচ্ছে না। নতুন কিছুতে ব্যস্ত?
আজমেরী হক বাঁধন : হ্যাঁ, এটা সত্যি। অনেক দিন ধরেই পর্দায় নেই আমি। এ বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে একটা কাজ গেছে। ওইভাবে নতুন কোনো শুটিং এখনও শুরু করিনি। তবে প্রস্তুতি চলছে বেশ কয়েকটা কাজের। এর মধ্যে যদি বলতে হয়, তাহলে হইচইয়ের ‘ডেল্টা টুয়েন্টি ফিফটি ওয়ান’ শিরোনামে একটি কাজের ঘোষাণা দেওয়া হয়েছে। ওটা নিয়েই ব্যস্ত। তাছাড়া আরও কাজের কথা আছে, কিন্তু হইচইয়ের সিরিজটা নিয়েই প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া নিজেকে নিয়েও একটু ব্যস্ত। আর মেয়ে-ফ্যামিলি তো আছেই। এখন তো বলাই যায়, এ বাঁধনকে অভিনয় ছেড়ে যাবে না।
আজমেরী হক বাঁধন : আসলে চরিত্র নিয়ে এখন বিস্তারিত বলা যাবে না। শুটিংয়ের আগে নিষেধ আছে। আর অন্য যে কাজগুলো আছে, তা নিয়ে কিছু বলার মতো ঘটনা ঘটেনি। যদি আমার কোনো কাজের কথা বলার মতো কোনো জায়গায় যায়—তাহলে অবশ্যই আমি তা আপনাকে জানাব। কিন্তু যা এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি, সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। সব চূড়ান্ত হলেই বলতে পারব।
আরটিভি : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি দেখে অনেক ভক্তই অবাক হয়েছেন। ওই ছবিটার রহস্য কী?
আজমেরী হক বাঁধন : (হাসি দিয়ে) এটা আসলে অবাক হওয়ার মতো তেমন কিছু ঘটেনি। আমি, আমার বাচ্চা ও তাদের ফ্যামিলি নিয়ে একটা গেটটুগেদার করেছি। যেহেতু গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আছে ওরা। তাই ওদের নিয়ে ফ্যামিলিসহ বের হয়ে গিয়েছিলাম ‘প্যালেসে’। এটা হচ্ছে হবিগঞ্জের একটা চমৎকার রিসোর্ট। সেখানে যাওয়ার আগে রুম বুকিং দিয়েছিলাম। ওরা খুব সাদরে আমাকে গ্রহণ করেছে। বলেছে যে, ম্যাডাম আপনি আসুন। পরে যখন গিয়েছি দেখি আমার রুমের বিছানায় আমারই অভিনীত কাজগুলোর নাম দিয়ে সাজিয়ে সারপ্রাইজ দিয়েছে। বেড়াতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতায় আমি মুগ্ধ। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
আরটিভি : বিয়ে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?
আজমেরী হক বাঁধন : (হাহাহা) বিয়ে নিয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ, আমি যেমন আছি, ভালো আছি। আমার বাচ্চা নিয়ে, আমার জীবন নিয়ে, আমার নিজের স্বাধীনতা নিয়ে বেশ ভালো আছি। ওই অর্থে বিয়ে নিয়ে চিন্তা করার সময় একদমই মাথায় নেই। যদি কখনও পরিকল্পনা করি তাহলে অবশ্যই আপনাকে সবার আগে জানাব।
আরটিভি : দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে?
আজমেরী হক বাঁধন : নাহ! এর মধ্যে দেশের বাইরে যাচ্ছি না। কারণ, যদি সত্যি বলতে হয় তাহলে বলব, দেশের বাইরে ভ্রমণ করাটা আসলে ওইভাবে খুব বেশি একটা করা হয়নি। একটা সময় আমার বাবা পোস্ট-গ্রাজুয়েশন করতে নেদারল্যান্ডসে গিয়েছিলেন। তখন আমরা ছোট, ইউরোপের অনেক কান্ট্রিতেই ঘুরেছিলাম। এ ছাড়া নিজ দেশের প্রচুর জায়গায় ঘুরেছি। অন্যদিকে যখন কান উৎসব থেকে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রচার শুরু হয়, তখন আমার কাজ নিয়েই অনেক দেশে যেতে হয়েছে। এটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগার বিষয়। বলতে গেলে নিজের কাজের প্রেক্ষিতে বিদেশ ভ্রমণ আমাকে খুবই প্রেরণা দিয়েছে। কারণ, তখন কোভিড ও তার পরবর্তী সময়ে জার্নিটা করতে হয়েছিল। তাই তখন প্রকৃতি অনেকটাই সুন্দর ছিল। আর এই ভ্রমণটাই আমার জীবনের সবচেয়ে স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। আপাতত এতটুকুই। এখন দেখা যাক সামনে কখন, কোথায় কীভাবে যাওয়া হয়।
আরটিভি : প্রায় সময়ই বোল্ড লুকে আপনাকে দেখা যায়, এ জন্য নিশ্চয়ই অনেকে বাজে মন্তব্য করে, তাদের নিয়ে কী বলবেন?
আজমেরী হক বাঁধন : ঠিক বোল্ড না, আমার ব্যক্তিত্ব নিয়েই অনেকের ভয় কাজ করে। হয়তো এটা আমি ফিল করি। শুধু যে লুকের জন্য তা নয়, আমার কথা বলা, চলা, স্টাইল সবকিছু নিয়েই হয়তো অনেকের জন্য অস্বস্তিকর। তাই অনেক সময় দেখি বিভিন্ন মন্তব্য করে থাকেন তারা। ওই অর্থে তাদের নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না কিংবা আমার ভাবনার জায়গাতেও রাখতে চাই না। আমি শুধু আমাকেই বলতে চাই, আমি ভালোবাসি আমাকে, মাত্র ভালোবাসতে শিখেছি। নিজের অধিকারগুলো বুঝে পেতে চেষ্টা করছি। নিজের স্বাধীনতাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি মাত্র। সে ক্ষেত্রে যদি এটা কারও খুব বেশি একটা গ্রহণযোগ্য না হয়, সেখানে তো আমার হাতে কিছু নেই। যার যার মন-মানসিকতা যেরকম, সে তেমনভাবেই চিন্তা করবে। আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই। নিজেকে সময় দিতে চাই। অন্য কারও কথায় না।
আরটিভি : নাটকে কী আর ফেরা হবে?
আজমেরী হক বাঁধন : টেলিভিশন নাটকে আসলে আগের মতো করে অভিনয় করা হবে কি না, তা এখনও বলতে পারছি না। আগ্রহ নেই নাটকে, এমনটাও বলছি না। কিন্তু কাজের মানটা আসলে খুব জরুরি এখন আমার কাছে। যদি ভালো মানের নাটক হয়, তাহলে করার সম্ভাবনা বেশি। তবে কাজের মানের জন্য যে কষ্ট অতীতে হয়েছিল কিংবা হবে, সেই কাজগুলো থেকে বিরতি নিয়েছি। আর যদি বলেন টাকার জন্য যদি কাজ করছি তাহলে সবচেয়ে ভালো অপশন হচ্ছে প্রমোশনাল কাজ অথবা বিজ্ঞাপন। তবে বিজ্ঞাপন, ওটিটির জন্য ওয়েব ফিল্ম কিংবা শর্ট ফ্লিম, ওয়েব সিরিজ এগুলো নিয়মিত করাতে আমি তো অবশ্যই আগ্রহী। এখন চরিত্রটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে শিখে গেছি।
আরটিভি : নিজ দেশের ক্যামেরা আর অন্য দেশের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। কোনো তফাত খুঁজে পেয়েছেন?
আজমেরী হক বাঁধন : তফাত বলতে খুব বেশি কিছু পাইনি। একই রকম মনে হয়েছে আমার কাছে। আসলে শিল্পমনা নির্মাতা কিংবা নির্মাণের জায়গা থেকে সবাই তার বেস্ট ট্রাই করে থাকেন। এমনটিই মনে হয়েছে দুই বাংলায় কাজ করে। তবে নির্মাতা সাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা একটু ভিন্ন ছিল।
আরেকটা কফির অর্ডার দিই, কী বলুন? কথা বলতে বলতে কফি খেতে দারুণ লাগছে। বাইরে বৃষ্টিও বাড়ছে। আমি বাঁধনের কথায় সায় দিলাম, আসলেই তো শ্রাবণের এই আঁধারে বেশ ভালোই চলছে আড্ডা। তবে পাঠকের জন্য এটুকুই। বাকি আলাপ হবে কফি খেতে খেতে, কী বলেন?